আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের বিশেষ উপলক্ষ্যে দেশের নানা প্রান্তে বাঙালি জাতির ভাষার প্রতি ভালোবাসা ও সম্মানের ইতিহাস স্মরণ করা হচ্ছে। ১৯৫২ সালের সেই হৃদয়বিদারক দিনটি আজও আমাদের মনে করিয়ে দেয়, কীভাবে মাতৃভাষার জন্য বাঙালি তরুণরা তাদের প্রাণের ক্ষতি স্বীকার করেছিল।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:
১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তানের বিভাজনের পর পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ, যাদের মাতৃভাষা বাংলা, তাদের ভাষাগত অধিকার অর্জনের লক্ষ্যে প্রতিবাদের সংগঠিত আন্দোলন শুরু করে। ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে ঢাকা ও অন্যান্য শহরে ছাত্র ও সাধারণ মানুষ মিলিত হয়ে ভাষার মর্যাদা রক্ষার দাবিতে প্রতিবাদ চালায়। সরকারের পক্ষ থেকে অবিচলিত নীতিমালা গ্রহণে সংঘর্ষে বহু তরুণ শহীদ হন, যাদের আত্মত্যাগ আজও ভাষার ইতিহাসে এক অবিচ্ছেদ্য অধ্যায় হিসেবে স্মরণীয়।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও উদযাপন:
১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই দিবসটি মাতৃভাষার প্রতি সম্মান প্রদর্শন, ভাষাগত বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উদযাপনে পালিত হচ্ছে। দেশের নানা সংবাদ মাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান এই দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচি, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে।
বর্তমান প্রাসঙ্গিকতা:
বর্তমান বিশ্বে ভাষাগত বৈচিত্র্য ও সাংস্কৃতিক ঐক্যের গুরুত্ব অপরিসীম। ক্ষুদ্র ভাষাগুলোর বিলুপ্তি প্রতিরোধে, প্রত্যেক ভাষার প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও তাদের সংরক্ষণে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা ও আত্মসমর্পণের গল্প আমাদের নতুন প্রজন্মকে ভাষা ও সংস্কৃতির মূল্য সম্পর্কে সচেতন করতে সাহায্য করবে।
আজকের এই দিনটি কেবল অতীতের আত্মত্যাগের স্মৃতি নয়, বরং বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রতিজ্ঞার প্রতীক। ভাষা সংরক্ষণ, সাংস্কৃতিক ঐক্য ও জাতিগত পরিচয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে আমাদের প্রত্যেকেরই দায়িত্ব রয়েছে।
মন্তব্য করুন