বরিশাল নগরীর প্রায় সব বিনোদন কেন্দ্রই বর্তমানে হকারদের দখলে চলে গেছে। বিশেষ করে নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বেলস পার্ক, ত্রিশ গোডাউনের খোলা প্রাঙ্গণ, মুক্তিযোদ্ধা পার্কসহ অন্যান্য খোলা পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানগুলো এখন হকারদের অবৈধ দখলে। এর ফলে এসব স্থানে পরিবার নিয়ে নির্বিঘ্নে সময় কাটানো ক্রমেই দুষ্কর হয়ে উঠছে। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ—বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) ও জেলা প্রশাসন—রয়েছে নীরব।
একসময় যেখানে নগরবাসী পরিবার-পরিজন নিয়ে অবসর সময় কাটাতে পারতেন, শিশুদের খেলা কিংবা তরুণদের আড্ডা দিতেও উপযোগী পরিবেশ ছিল, এখন সেখানে হাঁটাচলার মতো অবকাশও নেই।
বেলস পার্ক যেন স্থায়ী বাজার
বেলস পার্ক ছিল নগরবাসীর অন্যতম প্রিয় বিনোদনকেন্দ্র। কিন্তু বর্তমানে পার্কের মূল প্রবেশপথ থেকে শুরু করে অভ্যন্তরের প্রতিটি পথ ও কোণায় বসেছে হকারদের পসরা। কোথাও খেলনার দোকান, কোথাও খাদ্যপণ্যের অস্থায়ী স্টল। এতে শিশুদের দোলনা বা স্লাইডে ওঠাও হয়ে উঠেছে কষ্টকর।
ত্রিশ গোডাউন ও মুক্তিযোদ্ধা পার্কেও একই অবস্থা
নগরীর ত্রিশ গোডাউনের খোলা জায়গা, যা সকালে হাঁটাহাঁটি ও ব্যায়ামের জন্য ব্যবহৃত হয়, এখন হকারদের দখলে। ব্যস্ত রাস্তার পাশে দোকান বসিয়ে রাখা হচ্ছে, তৈরি হয়েছে যানজটের মতো পরিস্থিতি। এ ছাড়া নগরীর অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান মুক্তিযোদ্ধা পার্কেও একই দৃশ্য—হকারদের ভিড়ে হারিয়ে গেছে শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্য।
নগরবাসীর ক্ষোভ
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিনোদনের জায়গাগুলো এখন আর পরিবার নিয়ে যাওয়ার মতো নেই। শিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তো দূরের কথা, বরং চারপাশে বর্জ্য, শব্দ ও বিশৃঙ্খলার কারণে বিরক্ত হয়ে ফিরতে হয়।
এক অভিভাবক জানান, “পার্কে গিয়ে মনে হয় বাজারে চলে এসেছি। এত ভিড়, এত দোকান—একটু শান্ত পরিবেশে বসে থাকার সুযোগও নেই।”
অভিযান কার্যকর নয়, নেই স্থায়ী সমাধান
সিটি করপোরেশন মাঝে মাঝে হালকা উচ্ছেদ অভিযান চালালেও তা স্থায়ী কোনো সমাধান দিতে পারেনি। কয়েকদিনের মধ্যেই আবার আগের চেহারায় ফিরে আসে পার্কগুলো।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হকারদের জন্য নির্ধারিত হকার জোন তৈরি না করে বিনোদনকেন্দ্র দখলমুক্ত রাখা সম্ভব নয়। একইসঙ্গে প্রয়োজন নিয়মিত তদারকি ও সচেতন নাগরিক সমাজের সম্পৃক্ততা।
সবার জন্য উন্মুক্ত বিনোদন চাই
বরিশাল নগরীতে শিশু-কিশোর, প্রবীণ ও নারীদের উপযোগী যে অল্প কয়েকটি খোলা বিনোদনকেন্দ্র রয়েছে, তা রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি। হকারদের পুনর্বাসন ও বিকল্প বাজারের ব্যবস্থা করে পার্কগুলো পুনরুদ্ধারে দ্রুত উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সচেতন নগরবাসী।
মন্তব্য করুন