বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার প্রাণকেন্দ্রীয় সড়ক রামপট্টি বাসস্ট্যান্ড থেকে রহমতপুর ব্রীজ পর্যন্ত পথটি স্থানীয়দের কাছে এখন আতঙ্কের সমার্থক হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন হাজারো মানুষ এই পথে চলাচল করলেও অব্যবস্থাপনা, সংকীর্ণ রাস্তা, আলো-আঁধারির ঝুঁকি আর যানবাহনের চাপ—সব মিলিয়ে এই সড়ক এখন দুর্ঘটনার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত।
সড়কের বেহাল চিত্র:
পুরো সড়কপথে খানাখন্দে ভরা গর্ত, কোথাও ভাঙাচোরা, কোথাও আবার হঠাৎ সংকীর্ণতা। গাড়ি চালকরা এসব জায়গায় হঠাৎ ব্রেক কষতে গিয়ে দুর্ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছেন। পাশের খাল ও নালার ধারে কোনো রেলিং বা সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই। ফলে রাতে গাড়ি বা মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারালে সহজেই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
যানজট ও ট্রাফিক ব্যবস্থার অভাব:
এই পথে প্রতিদিন ভাড়ায় চলা বাস, ট্রাক, অটোরিকশা, ইজিবাইকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু কোথাও কোনো ট্রাফিক পুলিশ, সিগন্যাল বা গতিনিয়ন্ত্রক নেই। ফলে চালকেরা প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালান। এতে সড়কে হঠাৎ ধাক্কা, উল্টে যাওয়া, বা গাড়ি-পথচারী সংঘর্ষের ঘটনা নিয়মিত ঘটে।
শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ভোগান্তি:
রামপট্টি থেকে রহমতপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকায় প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থী এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। তারা বলেন, সকাল-বিকালে দ্রুতগামী গাড়ি ও ভিড়ের কারণে পারাপার হওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়।
একজন অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, “প্রতিদিন বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাই, কিন্তু মন সবসময় দুশ্চিন্তায় থাকে, ওরা নিরাপদে ফিরবে তো?”
রাতে অন্ধকারে ভয়:
পুরো সড়কপথেই পর্যাপ্ত স্ট্রিটলাইট নেই। সন্ধ্যার পর এই এলাকায় পথচারীদের হাঁটতে ভয় হয়। অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলচালকরা হেডলাইট ছাড়া চলাচল করলে দুর্ঘটনা প্রায় অনিবার্য হয়ে পড়ে।
ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভাব:
রামপট্টি বাসস্ট্যান্ড ও রহমতপুর বাজার এ অঞ্চলের মানুষের প্রধান কেনাবেচার কেন্দ্র। কিন্তু সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার কারণে ব্যবসায়ী ও ক্রেতা উভয়েই ভোগান্তিতে পড়ছেন। মালামাল পরিবহন ধীরগতির কারণে খরচ বাড়ছে এবং অনেক ব্যবসায়ীর ক্ষতিও হচ্ছে।
বিশিষ্টজনদের মতামত:
বিশিষ্ট সমাজসেবক রাজীব ঘরামী বলেন,
“রাস্তার সংকীর্ণতা, ট্রাফিক ব্যবস্থার অভাব আর জনসাধারণের উদাসীনতাই মূলত দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। সবাই যদি সচেতন না হয় এবং কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে এখানে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”
স্থানীয় শিক্ষাবিদ মোঃ আবদুল হক মাস্টার বলেন,
“রামপট্টি বাসস্ট্যান্ড থেকে রহমতপুর ব্রীজ পর্যন্ত পথটি শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের প্রতিদিনের যাতায়াতের মাধ্যম। প্রতিনিয়ত অভিভাবকেরা ভয়ে থাকেন। সরকারের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে এ এলাকা নিরাপদ করা।”
তরুণ সমাজকর্মী জাহিদ তালুকদার জনি বলেন,
“এই রাস্তা শুধু একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা নয়, বরং বাজার, স্কুল, কর্মজীবী মানুষ সবার জীবনরেখা। কিন্তু সড়কের দুরবস্থা ও ব্যবস্থাপনার অভাবে মানুষের জীবন হুমকির মুখে। এখনই উদ্যোগ না নিলে বড় দুর্ঘটনা অনিবার্য।”
এলাকাবাসীর দাবি:
তাদের মতে, এগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা না হলে যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, যা জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
মন্তব্য করুন