বরিশাল বাবুগঞ্জের মাধবপাশায় পুণ্যস্নান উৎসব চলাকালে দুর্গাসাগরে ডুবে এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। মৃতের নাম মনদীপ মণ্ডল (১৮)। তিনি বরিশাল নগরীর অক্সফোর্ড মিশন রোড এলাকার সাগর মণ্ডলের ছেলে। সরকারি সৈয়দ হাতেম আল কলেজে এইচএসসিতে অধ্যয়নরত ছিলেন মনদীপ।
মৃতের বাবা জানিয়েছেন, পুণ্যস্নানের উদ্দেশ্যে নগরীর বাসা থেকে পরিবারের সবাই দুর্গাসাগরে যান। ১২টার দিকে তার ছেলে স্নান করতে নেমে ডুবে যাচ্ছিল। এ সময় দ্রুত অন্য ভক্তরা তাকে উদ্ধার করে দুর্গাসাগরের ঘাটলায় নিয়ে আসে। সেখান থেকে শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালে দায়িত্বরত কোতয়ালি মডেল থানার কনস্টেবল মো. হেমায়েত সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুর্গাসাগর থেকে এক যুবককে নিয়ে আসা হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃতের সঙ্গে থাকা বাবা জানিয়েছেন, দুর্গাসাগরে পুণ্যস্নান করতে গিয়ে ডুবে মারা যায় তার ছেলে।’ এদিকে সকাল থেকে পুণ্যার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে দুর্গাসাগর। তারা দুর্গাসাগরের পাড়ে বটতলায় মোমবাতি প্রজ্বালন করেন। পূজা শেষ করে দীঘিতে স্নান করেন তারা।
চৈত্র মাসের অষ্টমী তিথিতে দুর্গাসাগরে স্নান করে পাপ থেকে মুক্তি লাভের আশায় প্রতি বছরই বিভিন্ন স্থান থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা আসেন। হিন্দু পুণ্যার্থীরা গঙ্গাদেবীর চরণে আত্মসমর্পণ করে পূজা, অর্চনা ও প্রার্থনাসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পাপমুক্তির জন্য স্নান করেন। এ উৎসব সকাল থেকে শুরু হয়ে চলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
স্নান করতে আসা প্রদীপা রায় জানান, বিগত বছরের পাপ থেকে মুক্তি এবং আগামী দিনগুলো যাতে সবাইকে নিয়ে সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারেন সেই অর্চনা করেছেন। প্রতি বছরই এভাবে পূজা অর্চনা করে আসছেন তিনিসহ তার পরিবারের সদস্যরা।
পূজারি বিষ্ণু দাস জানান, প্রতি বছর পুণ্যস্নানের দিন তিনি দুর্গাসাগরে আসেন দেবীর ভক্তদের পূজা-অর্চনা করানোর জন্য। এ সময় ভক্তবৃন্দ খুশি হয়ে যা দেন তিনি তা গ্রহণ করেন। এতেই তার তৃপ্তি বলে জানান তিনি।
হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রবীণ ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, জগতের যাবতীয় সংকীর্ণতা ও পঙ্কিলতার আবর্তে ঘেরা জীবন থেকে পাপমুক্তির বাসনায় হিন্দু পুণ্যার্থীরা প্রায় দুইশ বছর ধরে দুর্গাসাগরে স্নান উৎসবে যোগ দিয়ে থাকেন। এ উৎসবকে ঘিরে দুর্গাসাগর প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয়েছে গ্রামীণ মেলার।