বরিশালে লোকাল বাসের শ্রমিকদের আচরণ ক্রমশই অসহনীয় হয়ে উঠছে। যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার, এমনকি সুযোগ পেলেই তাদের গায়ে হাত তোলার মতো অভিযোগ নিয়মিত উঠছে। যাত্রীদের অভিযোগ, বাসের শ্রমিকরা অনেক ক্ষেত্রে যাত্রীদের সঙ্গে অসভ্য ব্যবহার করে, অল্পবয়সী থেকে বয়স্ক ব্যক্তিরাও এর শিকার হচ্ছেন। অধিকাংশ সময় এই আচরণের শিকার হন নারী ও শিশু যাত্রীরা।
গতকাল এমনই এক ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোষ্ট করেছেন বিএম কলেজ শিক্ষার্থী আবির মাহমুদ।
বরিশাল পত্রিকা’র পাঠকদের জন্য তার পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
পুরো ঘটনার সময়কাল মাত্র ১৫মিনিট।
০২-১১-২০২৪ইং। বিকাল ৫:০৮ এ আমি রহমতপুর থেকে “হাসিব আব্দুল্লাহ রিমা(বরিশাল ব ১১০০-৯৫)” নামের একটি লোকাল বাসে উঠি বরিশাল যাওয়ার উদ্দেশ্যে। তখন এক মহিলা বাস থেকে নামতে নামতে বাসের সুপারভাইজারকে কিছু একটা বললেন। সুপারভাইজার জবাব দিলেন “এই মাতারি আমনে কি কইলেন। আবার কন সাহস থাকলে। আমনে মাতারি না হইয়া, ব্যাডা হইলে কানের উপর মা* রতাম।” ওই মহিলা ফ্যালফ্যাল করে লোকটার দিকে তাকিয়ে রইলেন। মহিলার বয়স ৪৫+ হবে।
আমি “আই” সিরিয়ালের একটা সিটে বসি। বাস ছাড়লো। আমি সচারাচর লোকাল বাসেই যাতায়াত করি। কিন্তু আজকের বাসের ড্রাইভার এত রাফ ভাবে চালাইছে, আমার নিজেরই অনেক ভয় লাগছিলো। স্পিড বেকার গুলোতেও স্লো করার প্রয়োজন মনে করেনি। যাই হোক, ২/১জন আস্তে চালানোর অনুরোধ করলেও তা ড্রাইভার আমলে নেয়নি। বাসের অত্যাধিক গতিতে ভয় পেয়ে শেষ লাইনে বসা মহিলা যাত্রীরা দোয়া পরতেছিলো। এক পর্যায়ে আমি সুপারভাইজারকে বললাম, “ভাই আপনি দয়া করে ড্রাইভারকে বলেন, গাড়িটা একটু আস্তে চালাতে”। সুপারভাইজার হাতের ইশারায় আমাকে কথা বলতে বারন করলো।
পেছনের সিরিয়ালে থাকা এক মেয়ে সুপারভাইজারের সামনেই হঠাৎ বলে উঠলো, “এতবার অনুরোধ করার পরেও ড্রাইভার গাড়ি আস্তে চালাইতেছে না। ওরে এখন গিয়ে একটা থা* প্প র মারা উচিত”। সুপারভাইজার এটা শোনার সাথে সাথে বললো “আমনের এত্ত বড় সাহস একটা মাইয়া হইয়া , একটা ড্রাইভাররে থাবড় দেয়ার কথা কন.? মা রেন তো পারলে যাইয়া, দেহি আমনের কইলজা কত্ত বড়।” মেয়েটা বললো “মা* রাই উচিত”
সুপারভাইজার আবার বললো ” আমনে যদি মা** মানুষ না হইতেন, এই গেটে খারা করাইয়া খারা মাজায় একটা লাত্তি মারতাম”। এটা শোনার সাথে সাথে আমি প্রতিবাদ করে বলি, “এ ভাই মুখ সামলাইয়া কথা বলেন। আপনি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করতাছেন।”
সাথে সাথে বাসের কয়েকজন যাত্রী আমাকে থামতে বলে। এবং সাথে একজন ওই মেয়েকে এটাও বলে যে “মাইয়া মানুষের বাইরে এত বাড়তি কথা কি দরকার.?”
তারপর সুপারভাইজার একা একা অনেক কথা বলতে থাকে। যে “স্টুডেন্ট পাওয়ার চো** আসে, তোগো পাওয়ার জায়গা মত দিমু আইস”, এই সেই অনেক কথা।
তো মুল বিষয় হচ্ছে এই রুটে এরকম হয়রানি নতুন কিছু না তবে এই অভিজ্ঞতা এক ভিন্ন রকম অভিজ্ঞতা। ওই মেয়েটা এরপর শুধু কান্নাই করতেছিলো। আমিও বোকার মত কিছু না করতে পারার আক্ষেপে ভুগছি। হয়তো ২/১জন কথা বলার সাহস করলে আমার সাইডটা স্ট্রং হতো।
একবার চিন্তা করুন, ওই মেয়েটা বা শুরুতে বাস থেকে নামা ভদ্র মহিলা যদি আমাদেরই কারো আপনজন হতো! দ্রুত এ বিষয় গুলো নিয়ে পদক্ষেপ না নিলে এর ভয়াবহতা আরও বাড়বে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকএক যাত্রী বলেন, “গতকাল সকালে বাসে উঠতে গিয়ে হেল্পার আমার সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেন। এমনকি আমার পাশে দাঁড়ানো বন্ধুকেও ধাক্কা দেন।” তিনি আরও জানান, বাস শ্রমিকরা কোনও কারণ ছাড়াই যাত্রীদের ওপর চড়াও হয়ে যায় এবং অনেকে অভিযোগ করতে ভয় পায়।
যাত্রী কল্যাণ সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ ধরনের কর্মকাণ্ড অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। পাশাপাশি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তারা বলেন, যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে বরিশালের যাত্রীদের জন্য এ ধরনের যাতায়াতের ব্যবস্থা বিপজ্জনক হয়ে উঠবে।
বরিশাল জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি নিয়ে তারা শিগগিরই পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।