বরিশাল বিভাগীয় সদরে ১২৮ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মানাধীন ক্যান্সার, হৃদরোগ ও কিডনী হাসপাতাল ভবন নির্মানকাজ নির্ধারিত সময়ের এক বছরে মাত্র ৩৫ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে।
জানা গেছে- ব্যায় বৃদ্ধি করে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে পুরো প্রকল্প সম্পন্ন করার সময়সীমা বেঁধে দিয়ে সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশন নির্দেশনা দিলেও বর্ধিত সে সময়ের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ক্যান্সার, হ্রদরোগ ও কিডনীর উন্নত চিকিৎসার লক্ষ্যে দেশের সবগুলো বিভাগীয় সদরে ৮টি অনুরুপ হাসপাতাল নির্মানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সরকার।
সে আলোকে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ক্যাম্পাসে একটি ১৭ তলা ভবন নির্মাণে গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাথে ‘মেসার্স বঙ্গ বিল্ডার্স ও মেসার্স খান বিল্ডার্স-জেভি নামের একটি যৌথ অংশিদারী প্রতিষ্ঠান চুক্তিপত্র সম্পাদন করে ২০২১ সালের ১৯ জুলাই।
চুক্তি অনুযায়ী ২০২৩ সালের ১৮ জুলাই কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু চলতি বছরের ২২ মে পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির কাজের অগ্রগতি মাত্র ৩৫ ভাগ। ৪৬০ শয্যার এ হাসপাতাল ভবনটির জন্য ইতোমধ্যে নির্মান প্রতিষ্ঠানকে ২৮ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে বলে বরিশাল গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
তবে নির্মান প্রতিষ্ঠানের বকেয়া এখন ১২ কোটি টাকাও বেশী। একটি সূত্রের মতে অর্থ বরাদ্দ না থাকায় কাজের গতি শ্লথ হয়ে গেছে। তবে গণপূর্ত অধিদপ্তরের মতে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান চুক্তি অনুযায়ী কাজ সম্পাদন করতে পারেনি। ফলে তহবিলও আসেনি। তহবিলের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি লেখা হয়েছে।
খুব শিগগিরই তহবিল প্রাপ্তি সাপেক্ষে নির্মান প্রতিষ্ঠানকে অর্থ পরিশোধ করা হবে। সরেজমিনে দেখা গেছে, নির্মানাধীন ১৭তলা বরিশাল ক্যান্সার,হ্রদরোগ ও কিডনী হাসপাতাল ভবনটির মাত্র ৬তলা পর্যন্ত ছাদ ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে। ২-১ দিনের মধ্যে ৭তলার ছাদ ঢালাই সম্পন্ন হবে।
আগামী দু বছরে অবশিষ্ট ১০তলা ঢালাই সহ পুরো ভবনটির নির্মানকাজ সম্পন্ন হবে কিনা সে ব্যপারে সংশয় রয়েছে খোদ গণপূর্তের কর্মকর্তাদের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রকৌশলী এ লক্ষ্যে সময়মত তহবিলের যোগানসহ নির্মান প্রতিষ্ঠানকে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন। তবে দুটি বেজমেন্ট সহ ৭তলা পর্যন্ত ছাদ ঢালাইয়ের পরে ইতোমধ্যে নির্মান প্রতিষ্ঠানের ১২ কোটি টাকার বেশী বকেয়া পড়ে থাকাই অচলাবস্থার মূল কারণ বলে দাবি নির্মান প্রতিষ্ঠানের।
গত ২৯ এপ্রিল প্রকল্প ব্যায় বৃদ্ধি সহ বর্ধিত সময়সীমা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা একনেক এর অনুমোদন লাভ করলেও এ সংক্রান্ত প্রশাসনিক অনুমোদন এখনো না মেলায় চলতি অর্থ বছরের অবশিষ্ট সময়ে তহবিলের সংস্থান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। ফলে সংশোধিত ও বর্ধিত প্রকল্প ব্যায় ও সময়ে বরিশাল ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগ হাসপাতাল ভবনের নির্মান কাজ সম্পন্ন নিয়ে সন্দেহ ক্রমশ দানা বাঁধছে।
১শ কোটি টাকার এ প্রকল্পটির মেয়াদ দু’বছর বৃদ্ধির সাথে প্রকল্প ব্যায়ও ১২৮ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। এ ব্যাপারে বরিশাল গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ফয়সাল আলম বলেন, তহবিলের সংস্থান হলে বর্ধিত সময়সূচি অনুযায়ী কাজ শেষ করা সম্ভব। এ লক্ষে আমরা নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে সব ধরনের চাপ সৃষ্টি করব। তবে গত ২৯ এপ্রিল একনেক এর সভায় সংশোধিত প্রকল্পটি অনুমোদিত হলেও এখনো প্রশাসনিক অনুমোদন মেলেনি বলে স্বীকার করেন তিনি।
উল্লেখ্য, বরিশাল ক্যান্সার, কিডনি ও হ্রদরোগ হাসপাতাল ভবনটিতে দুটি বেজমেন্ট ছাড়াও ২য় তলা থেকে ৭ম তলা পর্যন্ত ক্যান্সার ইউনিট, ৮ম তলা থেকে ১২ তলা পর্যন্ত কিডনি ইউনিট এবং ১৩ থেকে ১৭তলা পর্যন্ত হ্রদরোগ ইউনিট স্থাপনের কথা রয়েছে।