২০ বছর বয়সী রুবেল ভুগছিলেন মৃগী রোগে। এরই মধ্যে মাথার একপাশে পানি জমে গেছে। তিনি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। অন্যান্য ছেলেদের মতো চাল-চলন, আচার-আচরণ রুবেলের ছিল না। তার আচরণ দেখে হাসাহাসি করতেন সবাই। তিনি মৃগী রোগী। তার অসহায়ত্বের দিকটা কেউ কখনো অনুভব করেনি। বরং কোনো একটা ঘটনা কেন্দ্র করে সবাই তার গায়ে হাত তুলেন। সবার কাছে বিষয়টি স্বাভাবিক হলেও নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণায় কষ্ট পান রুবেল। কাউকে নিজের এ কষ্টের কথা বুঝিয়েও বলতে পারেন না তিনি। কিছুদিন আগে হাসপাতালে এমআরআই করে জানা গেছে তার মাথার বাম দিকে পানি জমেছে। গল্পটি নিয়ে এসেছে দারুস সালাম এলাকার স্বেচ্ছাসেবী অমিত কুমার ভৌমিক।
লালবাগ এলাকার স্বপ্না রানী মন্ডল। তার গল্পে জানা গেছে তার নিজের জীবনের সঙ্গে ঘটে যাওয়া গল্প বর্তমান আলোচিত এলজিবিটিকিউ বিষয়টি। আয়না নামে তার ছোটবেলার বান্ধবী আছে। তবে তার কিছু আচরণে হঠাৎ করে ঘাবড়ে গিয়েছিল গল্পের লেখক।
তিনি জানান, আমরা ছোট থেকেই একসঙ্গে বড় হয়েছি। তবে তার কিছু সমস্যা ছিল। আমার অন্য কোনো ছেলে কিংবা মেয়ে বন্ধুই সে সহ্য করতে পারতো না। কারও সঙ্গে মিশলে আমার সঙ্গে রাগ করতো কথা বলতো না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর আরও অনেক জনের সঙ্গে মেশার সুযোগ হয়। এটা তার সহ্য হয়নি। একদিন রাতে সে আমার জন্যই নেশাগ্রস্থ হয়ে বাসার সামনে আসে। আমি তাকে লুকিয়ে ঘরে নিয়ে যাই। তবে সেদিন ঘটে অন্যরকম বিষয়। সে অন্যরকমভাবে আমার শরীর স্পর্শ করছিল। আমি তার আচরণে অনেকটা ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। এক পর্যায়ে সে আমাকে বলে সে আমাকে ভালোবাসে। এরপর অনেক বলার পর সে জানায় সে ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের ওপর ই আকর্ষণ বোধ করে। তবে বিষয়গুলো সম্পর্কে আমার জানা না থাকায় আমি হেরেজমেন্টের শিকার হই।
তিনি বলেন, এ বিষয়গুলো সম্পর্কে আমাদের জানা দরকার।
তাহলে এ ধরনের মানুষও যে আছে তাদের বিষয়ে আমাদের জ্ঞান থাকবে। এমন কিছু করে ফেলবোনা যাতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি ঠিক এ রকম আরও সমাজের নানা অসংগতি নিয়ে ২৬টি ভিন্ন ভিন্ন ফটো ভয়েস উপস্থাপন করা হয় রাজধানী ঢাকার সফিউদ্দিন শিল্পালয়ে। অভিনব এবং অংশগ্রহণমূলক ফটোভয়েস পদ্ধতি ব্যবহার করে শহরকেন্দ্রীক প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার বিষয়ক সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতাগুলোকে তুলে আনাই ছিল এ আয়োজনের মূল লক্ষ্য। এ প্রদর্শনী সকাল ১০টায় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হয় এবং দুুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়।
এদিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রজেক্টের অতিরিক্ত সচিব ও পরিচালক এ এফ এম আলাউদ্দিন খান। এছাড়া আইপাস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর সাইদ রুবায়েতের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন হাইকমিশন অফ কানাডা ইন বাংলাদেশের হেড অফ কো-অপারেশন জো গুডিংস।
প্রদর্শনীতে উপস্থাপিত ছবির গল্পগুলোতে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি, মাসিক নিয়মিতকরণ, গর্ভপাত পরবর্তী সেবা, প্রজননে জবরদস্তি, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা এবং নারী ও কিশোরীদের অধিকার ভঙসহ আরও বেশ কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হয়। এসব বিষয়ে আরও বৃহত্তর পর্যায়ের আলোচনা এবং কমিউনিটির ঐক্যবদ্ধতা ও সচেতনতা সৃষ্টি করাই এ ফটোভয়েস প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য।
অনুষ্ঠানে পৃথক বক্তব্যের মাধ্যমে উপস্থিত অতিথিরা তাদের অনুভূতি ও মতামত ব্যক্ত করেন।
প্রদর্শনীর গ্যালারি ঘুরে এসে এ এফ এম আলাউদ্দিন খান বলেন, ছবিগুলো নীরব, কিন্তু কিছু না বলেও এ ছবিগুলো আমাদের অনেক বার্তা দেয়, যা সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে পার্থক্যগুলোকে তুলে ধরে। ছবি ও গল্পগুলোর মাধ্যমে আমাদের সামাজিক অবস্থান, শিক্ষার অবস্থা ও অসঙ্গতিগুলো উঠে এসেছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জো গুডিংস বলেন, এ প্রদর্শনীর ছবিগুলো দেখে যদি অনুভব করা যায়, তবেই প্রকৃত দৃশ্যপট বোঝা সম্ভব। এভাবে যদি সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করা যায়, তবে, সমস্যার সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়াটাও সহজ হবে।
উপস্থিত অতিথিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সভাপতির বক্তব্যে আইপাস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর সাইদ রুবায়েত বলেন, আমরা আমাদের সমাজের বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরার জন্যই গবেষণা করি। ‘ফটোভয়েস ইনিশিয়েটিভ’ আজকাল প্রতিকূলতা এবং অজ্ঞতা মোকাবিলা করার জন্য একটি হাতিয়ারের মতো কাজ করে। আমরা এ প্রদর্শনীতে ‘ফটোভয়েস’ পদ্ধতিই ব্যবহার করেছি যেখানে সরাসরি ভুক্তভোগী এবং তাদের ঘনিষ্ঠদের কাছ থেকে প্রকৃত গল্পগুলো আমরা শুনতে পেরেছি। আপনাদের উপস্থিতির মাধ্যমে আমাদের অনুষ্ঠানটিকে আরও অর্থবহ করে তোলার জন্য আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
ফটোভয়েস প্রদর্শনীসহ এ উদ্যোগের কারিগরি সহায়তা প্রদান করেছে আইপাস বাংলাদেশ এবং মাঠপর্যায়ে উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করেছে সিরাক বাংলাদেশ।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে ইম্পুভিং এসআরএইচআর ইন ঢাকা (নিরাপদ প্রজনন স্বাস্থ্য) প্রকল্পের সহযোগী সংস্থা বাপসা, সিরাক বাংলাদেশ, আরএইচস্টেপ-এর নির্বাহী পরিচালক, ওজিএসবি-এর প্রেসিডেন্ট, আইপাস বাংলাদেশ ও প্রকল্পের কর্মকর্তাবৃন্দ, স্বেচ্ছাসেবী ও কমিউনিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।