বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের জন্য রাখা মাস্টার্স জোনের একক আসনে যৌক্তিক সময়ে উঠতে পারেন না শিক্ষার্থীরা। আবার কোনোমতে মাস্টার্স জোনে উঠলেও কিছুদিন পরেই শেষ হয়ে যায় পড়ালেখা ফলে কার্যত কোনো উপকার হয় না শিক্ষার্থীদের। আর এর নেপথ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কতৃক আরোপিত অযৌক্তিক নিয়ম।
নিয়মে বলা হয়েছে কোনো শিক্ষার্থী যদি একক আসনে উঠার জন্য আবেদন করতে চান তাহলে তার স্নাতোকের ফলাফল বের হতে হবে। এদিকে একজন শিক্ষার্থীর ফলাফল বের হতেই ৪-৫ মাস লেগে যায়। আবার হলের আসনের জন্যও সময় মতো আবেদনেরও আহ্বান করা হয় না একারনে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। ফলে চরম আবাসিক সংকটে জর্জরিত হলগুলোতে অধিকাংশ সময় আসন ফাঁকা থাকে।
শেষবার যখন শেরে-বাংলা হলে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের জন্য রাখা মাস্টার্স জোনের ৫০ টি আসনের জন্য আবেদন আহ্বান করা হয় তখন আবেদনই পড়েছিলো ৫০ টি। এর মধ্যে ভাইবাতে অনেকেই অনুপস্থিত থাকার কারনে ৪৩ জন শিক্ষার্থীকে আসন দেওয়া হয়েছে। ফলে এখনো ফাঁকা থেকে গেছে ৭ টি আসন। আর এসব আসনেই অবৈধভাবে থাকছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা। এদের মধ্যে অন্যতম ববি শাখা ছাত্রদলের বিলুপ্ত ঘোষিত কমিটির সদস্য সাব্বির আহমেদ। অবৈধভাবে সিট দখল করে থাকার ফলে নিরাপত্তার বিঘ্ন ঘটতে পারে দাবী হলের বৈধ শিক্ষার্থীদের।
সাব্বির আহমেদ বলেন, ” ছাত্রদল করার কারনে বিগত ৫ বছর হলে থাকতে পারিনি তাই এখন এখানে(অবৈধ সিটে) থাকি।” তিনি অবৈধ সিটে থাকতে পারেন কিনা প্রশ্নে বলেন অফিস দেখিয়ে দিয়ে বলেন, আপনি অফিসে যেয়ে কথা বলেন, এবিষয়ে তারা বলতে পারবে।”
এদিকে মাস্টার্স শেষে এসেও দ্বৈত আসনে সিট দিয়েছেন ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আমির হামজা ও শহিদুল ইসলাম এবং ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের(পুনঃভর্তি) মোহাম্মদ শিহাব। ফলে শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবী প্রশাসের অদূরদর্শীতা ও অদক্ষতার কারনেই এমন অনিয়ম চলছে হলগুলোতে।
বিজয়-২৪ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইয়ামিন বলেন, “আমার অনার্স শেষ হয়েছে ২ মাস আগে, এখন মাস্টার্স জোনের একক আসনে থেকে ভালোভাবে পড়ালেখা করার কথা থাকলেও এখনো দ্বৈত আসনে(এক সিটে ২ জন) রয়েছি। কবে উঠতে পারবো সেটাও জানা নেই। দেখা যাবে আমি যখন আসন পেয়েছি তখন মাস্টার্স শেষ অথবা প্রায় শেষের দিকে। তখন হলের আসন দিয়ে কোনো কাজে লাগবে না। আমাকে তো মাস্টার্স শেষ করেই ঢাকার উদ্দেশ্যে বা চাকরিতে চলে যেতে হবে। করণীয় বাতলে দিয়ে এই শিক্ষার্থী আরো বলেন, যদি প্রতি এক/দুই মাস অন্তর মাস্টার্স জোনের শিক্ষার্থীদের আবেদন জন্য আহ্বান করা হয় এবং কাজের ক্ষেত্রে গতি আনা যায় তাহলে অনেক ক্ষেত্রেই এ সমস্যার সমাধান হতে পারে”
শেরে বাংলা হলের প্রভোস্ট আব্দুল আলিম বছির বলেন,”আবাসন সংকটে জর্জরিত হল গুলোতে আসন ফাঁকা থাকা সত্যিই দুঃখজনক। আমরা এক্ষেত্রে কিভাবে সমস্যার সমাধান করা যায় তা নিয়ে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছি। সামনের বার স্নাতক শেষ বর্ষে থাকা শিক্ষার্থীরাও যেন আবেদনের করতে পারে সে ব্যবস্থা করবো। সেক্ষেত্রে হয়তো এমন পরিস্থিতির সমাধান হবে।”
উল্লেখ্য, মেয়ে শিক্ষার্থীদের হলের চিত্র ভিন্ন, সেখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা কম থাকার কারনে এধরনের কোনো ক্রাইটেরিয়া ফলো করা হয় না। স্নাতকের শেষ বর্ষে পড়াকালীন একজন শিক্ষার্থী একক আসনের জন্য আবেদন করতে পারেন আবার অনেকেই স্নাতকে থাকাকালীন একক আসনের জন্য বিবেচিত হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের চার হলে একক আসন সংখ্যা যথাক্রমে শেরে বাংলা হলে ৬৪, বিজয় ২৪ হলে ৩২, তাপসী রাবেয়া বসরী হলে ৫০, কবি সুফিয়া কামাল হলের সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য করুন