সরকারি চাকরি করার অধিকার বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের রয়েছে। তবে সেই চাকরিতে বৈষম্য তৈরি করে দিলে একটি মানুষ বাঁচার আশ্বাস হারিয়ে ফেলে।
গত ৫ই জুন কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছে আদালত।
হাইকোর্ট বলেছে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকুরিতে সব কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে যে পরিপত্র সরকার জারি করেছে তা অবৈধ এবং আইনগত কর্তৃত্ব বহিভুত। আদালতের এই রায়কে প্রত্যাখ্যান করে সারা বাংলাদেশে আন্দোলন গড়ে তুলে সকল সাধারণ শিক্ষার্থীরা তারই ধারাবাহিকতার আলোকে বরিশাল সরকারি বিএম কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
এটা কিভাবে সম্ভব মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনিরা যে কোটায় সুযোগ-সুবিধা পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছিল তা পুনরায় বহাল থাকবে!
কোটার মতো একটি চরম বৈষম্য আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বৈষম্য আমাদের পূর্বপুরুষরাও মানেননি, আমরাও মানছি না এবং আমাদের আগামীর প্রজন্ম তা মানবে না। স্বাধীন দেশে বৈষম্যের শিকার হওয়া কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বৈষম্যের শিকারই যদি হব, তাহলে যারা আজ বৈষম্য তৈরি করছে তাদের পিতারাই কেন বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন? ৫৬ শতাংশ কোটা থাকলে মেধাবীদের রিকশা চালানো ছাড়া উপায় থাকবে না।
সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ তৎপর ছিল, আছে এবং থাকবে। একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সরকারি চাকুরিতে মেধাবীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের সমান সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই।
দীর্ঘ প্রায় দেড় মাস যাবত আমরা সকল শিক্ষার্থীরা রাজপথে অবস্থান করছি, যেখানে আমাদের অবস্থান করার কথা আজ পড়ার টেবিলে। যেখানে আজকের জ্ঞান অর্জন করার কথা ছিল কলেজের ক্লাসগুলোতে সেখানে আমরা রাজপথে অবস্থান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এটা কোনমতেই আমরাও মেনে নিতে পারি না। আমরা তো আদালত কে বারবার বলেই যাচ্ছি কোটা বাতিল না করে সংস্কার করা হোক। প্রথমত আমাদের দাবি ছিল ৪টি সেই দাবি থেকে সরে এসে আমরা সকল শিক্ষার্থীরা এক দফায় এসে অবস্থান নিয়েছি।
আমাদের দাবি সকল গ্রেডের অযৌক্তিক ও বৈষম্য মূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানের উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম মাত্রায় এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংশোধনের এক দফা দাবি কর্মসূচি।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানি হয়, প্রাথমিকভাবে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ সব পক্ষকে চার সপ্তাহের স্থিতাবস্তা বজায় রাখার নির্দেশ দেয়। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি হবে আগামী সাত অগাস্ট।
আদালতের এই সিদ্ধান্তকে সকল শিক্ষার্থীরা ঘৃণা ভাবে প্রত্যাখ্যান করে আবারো রাজপথে অবস্থান নিয়েছে।এই আজ্ঞাবহ আদালত একের পর একটা তারা তালবাহানা করেই যাচ্ছে। আমরা আদালতে বারবার আপিল করে এটাই স্পষ্টভাবে বারবার জানাচ্ছি যে, আমরা কোটা বাতিল চাই না, আমরা চাই যে কোটাকে সংস্করণ করা হোক দরকার পড়লে ৫৬ শতাংশের কোটাকে ৫ শতাংশ নামিয়ে আনা হোক, কিন্তু আদালত আমাদের কথা শুনছে না। তবে আদালত যদি এরকম তালবাহানা করতে থাকে আমরাও সকল শিক্ষার্থীরা রাজপথে অবস্থান করবো এবং আমাদের দাবি-দাওয়া আদায় করে ছাড়বো।
ইতিমধ্যে আমাদের এক দফার দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সকল শিক্ষার্থীর প্রতিদিন আন্দোলন করে যাচ্ছে সেই আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আজ ঢাকা, কুমিল্লা, কুষ্টিয়া, চট্টগ্রাম, এবং আমাদের বরিশাল বিভাগের পার্শ্ববর্তী জেলা ভোলা সহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ ও ছাত্রলীগ দ্বারা হামলা করে গুরুত্বর আহত করা হয়েছে। শুধু তাই নয় হোস্টেলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের নির্মমভাবে অত্যাচার করা হচ্ছে। আজ আমাদের কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে আমাদের সরকারি বিএম কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা হুমকি ধামকি ও নির্যাতনের কবলে পড়ছে। তবে এতেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনোবল ভেঙে পড়েনি। হাজারো কষ্ট বেদনা আঘাতের চিহ্ন শরীরের বহন করে আমাদের সাথে কন্ঠে কন্ঠ মিলাচ্ছে। যতদিন পর্যন্ত আমাদের চাওয়া পাওয়া যতক্ষণ পর্যন্ত পূরণ না করা হবে আমরা রাজপথে অবস্থান করেই যাব। বৈষম্যমূলক কোটাপদ্ধতির সংস্কারের লক্ষ্যে বরিশাল সরকারি বিএম কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা সর্বদা সোচ্চার রয়েছি। আমাদের দাবি-দাওয়া আদায় করে তবেই পড়ার টেবিলে ফিরব ইনশাআল্লাহ।
হাফেজ মোঃ মাহাজাবিল আল নাঈম খাঁন, শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ।