বরিশালের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজে দেখা দিয়েছে তীব্র আবাসন সংকট। কলেজটির ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র চারটি আবাসিক হল রয়েছে। এসব হলে মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ৫ শতাংশ আবাসিক সুবিধা পাচ্ছেন। বাকি ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ভাড়া বাসা কিংবা মেসে থেকে পড়ালেখা করছেন। ক্যাম্পাসের বাইরের এসব আবাসনে তারা অতিরিক্ত ব্যয়ের পাশাপাশি প্রায়ই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে আবাসিক সংকটই কলেজের বড় একটা সমস্যা। কলেজটিতে চারটি আবাসিক হোস্টেল রয়েছে। এগুলো দীর্ঘদিনের পুরানো হওয়ায় ও সংস্কারের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে হোস্টেলের জন্য বরাদ্দ না আসায় আবাসন সংকটের সমাধান করা যাচ্ছে না বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।
আবাসিক সংকট কলেজের একটি বড় সমস্যা। দীর্ঘদিন ধরে বরাদ্দ না আসায় নতুন কোনো আবাসিক হোস্টেল নির্মাণ করা যাচ্ছে না। নতুন হোস্টেল নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। -অধ্যাপক আমিনুল হক, অধ্যক্ষ
চারটি আবাসিক হোস্টেলের মধ্যে ছেলেদের জন্য মহাত্মা অশ্বিনী কুমার, ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক (মুসলিম হোস্টেল) ও হিন্দু হোস্টেল এবং মেয়েদের জন্য বনমালী গঙ্গলি নামের একটি ছাত্রীনিবাস রয়েছে। এচার হোস্টেলে প্রায় পাঁচ হাজার আসন রয়েছে। যা কলেজের মোট শিক্ষার্থীর তুলনায় অতি নগণ্য।
সরেজমিনে দেখা গেছে, অশ্বিনী কুমার হলের ‘এ’ ব্লকের অবস্থা খুবই নাজুক। ছাদের পলেস্তারা খসে খসে পড়ছে। এমন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে থেকে পড়াশোনা করতে হয় এ হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের। শুধু হলের এ ব্লকই নয়, খারাপ অবস্থায় আছে হলের ‘বি’ ব্লকও।
সম্প্রতি হলটির ২টি রুমও পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে কলেজ প্রশাসন। হলগুলো অনিরাপদ হওয়ায় প্রায়ই আহত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ফলে আশঙ্কায় দিন কাটছে শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীরা জানান, সম্প্রতি নতুন হলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। দ্রুত হলগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নিলে আরও কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবেন তারা।
এছাড়া কলেজের ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক (মুসলিম) হলের পশ্চিম পাশের টিনশেড ভবনগুলোর করুন অবস্থা। নোংরা পরিবেশ এবং বসবাসের অনুপযোগী। হলের চার পাশে স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থা। এতে করে যেখানে-সেখানে জন্মেছে আগাছা। হলের চারপাশে আগাছা থাকায় প্রচুর পরিমাণে মশার উপদ্রব দেখা যায়।
১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিএম কলজের মুসলিম হলের টিনশেড ভবনগুলো। সংস্কার মেরামত না হওয়ায় এখন ছাত্রাবাসের নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, অনেক রুমের জানালা ভাঙা। হলের চার পাশে আগাছা থাকায় সব সময় সাপ-বিচ্ছুর আতঙ্কে থাকতে হয় ডায়নিং ও শৌচাগারের অবস্থাও খুবই করুণ।
মাস্টার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. সাইদুল ইসলাম রাকিব বলেন, মুসলিম হলের ভবন রয়েছে ১টি এবং টিনশেড ভবন রয়েছে ৪টি। টিনশেড দালান গুলোর বেহাল অবস্থা। বৃষ্টি আসলে অনেক রুমে পানি পড়ছে। হলের চারপাশে আগাছা, ময়লা আবর্জনা থাকায় মাঝে মাঝে অনেক রুমে বিষক্ত সাপ-বিচ্ছু প্রবেশ করে। টিনশেড ভবনের সংস্কার হয়নি দীর্ঘদিন। প্রতি বছর বর্ষায় টিনের চাল চুঁইয়ে অনেক রুমে পানি পড়ে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. হাসিব বিল্লাহ্ জানান, শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য বিএম কলেজে নতুন কোনো হোস্টেল নেই। যে হোস্টেল আছে সবগুলো পুরাতন, ঝুঁকিপূর্ণ ও বসবাসের অনুপযোগী। কলেজের অধ্যক্ষ যান, অধ্যক্ষ আসেন- কিন্তু কেউই শিক্ষার্থীদের আবাসনের মানোন্নয়নে মনোযোগ দেননি।
তিনি বলেন, যত অধ্যক্ষ এসেছেন তারা সবাই কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। কলেজের হোস্টেলগুলো যে সব থেকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে- এসব নিয়েও কেউ ভাবেননি। ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণে দেখা যায়নি কারো কোনো উদ্যোগ।
মুসলিম হলের ভবন রয়েছে ১টি এবং টিনশেড ভবন রয়েছে ৪টি। টিনশেড দালান গুলোর বেহাল অবস্থা। বৃষ্টি আসলে অনেক রুমে পানি পড়ছে। -সাইদুল ইসলাম রাকিব, শিক্ষার্থী
জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আমিনুল হক বললেন, আবাসিক সংকট কলেজের একটি বড় সমস্যা। দীর্ঘদিন ধরে বরাদ্দ না আসায় নতুন কোনো আবাসিক হোস্টেল নির্মাণ করা যাচ্ছে না। নতুন হোস্টেল নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ আসলে নতুন হোস্টেল নির্মাণ করা হবে। এতে করে আবাসন সংকট কমে আসবে।
কলেজ অধ্যক্ষ বলেন, গত জুন মাসের শুরুতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বিএম কলেজে সফরে আসেন। এসময়ে তিনি কলেজের আবাসিক হোস্টেল ঘুরে দেখেন। এক পর্যায়ে ১০ তলা ভবনের একটি ছাত্রাবাস নির্মাণে বরাদ্দ পেতে সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী দু-এক মাসেই নতুন ছাত্রাবাসের কাজ শুরু করতে পারবো।