ডেস্ক রিপোর্ট
১ এপ্রিল ২০২৪, ১০:০১ অপরাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

জাকাত কীভাবে আদায় করবেন

জাকাত শব্দের অর্থ শুচিতা ও পবিত্রতা, শুদ্ধি ও বৃদ্ধি। পরিভাষায় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে শরিয়তে নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদের নির্দিষ্ট অংশ কোরআনে কারিমে বর্ণিত আট প্রকারের কোন এক প্রকার লোক অথবা প্রত্যেককে দান করে মালিক বানিয়ে দেয়াকে জাকাত বলে। কুরআন মজিদে আল্লাহ তাআলা তার অনুগত বান্দাদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে বলেন- وَ الَّذِیْنَ یُؤْتُوْنَ مَاۤ اٰتَوْا وَّ قُلُوْبُهُمْ وَجِلَةٌ اَنَّهُمْ اِلٰی رَبِّهِمْ رٰجِعُوْنَۙ আর তারা যা কিছু দান করে এভাবে দান করে যে, তাদের হৃদয় ভীতকম্পিত থাকে (একথা ভেবে) যে, তারা তাদের রবের নিকটে ফিরে যাবে।’ (সুরা মুমিনূন : ৬০) এক আয়াতে মু’মিনদের সম্বোধন করে বলেন- وَ مَا تُنْفِقُوْا مِنْ خَیْرٍ فَلِاَنْفُسِكُمْ ؕ وَ مَا تُنْفِقُوْنَ اِلَّا ابْتِغَآءَ وَجْهِ اللّٰهِ ؕ وَ مَا تُنْفِقُوْا مِنْ خَیْرٍ یُّوَفَّ اِلَیْكُمْ وَ اَنْتُمْ لَا تُظْلَمُوْنَ তোমরা তো শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যই ব্যয় করে থাক। যে ধনসম্পদ তোমরা ব্যয় কর তার পুরস্কার তোমাদেরকে পুরোপুরিভাবে প্রদান করা হবে এবং তোমাদের প্রতি অন্যায় করা হবে না। (সুরা বাকারা : ২৭২) অন্য এক আয়াতে ঈমানদারদের সতর্ক করা হয়েছে তারা যেন অসংযত আচরণের মাধ্যমে তাদের দান-সদকাকে ব্যর্থ না করে দেয়।

ইরশাদ হয়েছে- یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تُبْطِلُوْا صَدَقٰتِكُمْ بِالْمَنِّ وَ الْاَذٰی ۙ كَالَّذِیْ یُنْفِقُ مَالَهٗ رِئَآءَ النَّاسِ وَ لَا یُؤْمِنُ بِاللّٰهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ ؕ হে ঈমানদারগণ, তোমরা অনুগ্রহ ফলিয়ে ও কষ্ট দিয়ে তোমাদের দান-সদকাকে বিনষ্ট করো না। ওই লোকের মতো যে লোক দেখানোর জন্য সম্পদ ব্যয় করে আর ঈমান রাখে না আল্লাহ ও আখিরাত দিবসের উপর। (সুরা বাকারা : ২৬৪) অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে- واحسنوا ان الله يحب المحسنين কোরআন মজীদের উপরোক্ত আয়াতসমূহ থেকে প্রমাণিত হয় যে, বিনয়, খোদাভীতি, ইখলাস ও আখলাকে হাসানা হল দান-সদকা আল্লাহর দরবারে মকবুল হওয়ার অভ্যন্তরীণ শর্ত। এসব বিষয়ে যত্নবান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সময়মতো জাকাত আদায় করে দেওয়া কর্তব্য। বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর জাকাত আদায়ে বিলম্ব করা যায় না। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে- وَ اَنْفِقُوْا مِنْ مَّا رَزَقْنٰكُمْ مِّنْ قَبْلِ اَنْ یَّاْتِیَ اَحَدَكُمُ الْمَوْتُ فَیَقُوْلَ رَبِّ لَوْ لَاۤ اَخَّرْتَنِیْۤ اِلٰۤی اَجَلٍ قَرِیْبٍ ۙ فَاَصَّدَّقَ وَ اَكُنْ مِّنَ الصّٰلِحِیْنَ আমি তোমাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তোমরা তা থেকে ব্যয় করবে তোমাদের কারো মৃত্যু আসার পূর্বে। অন্যথায় মৃত্যু এল সে বলবে হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আরও কিছু কালের অবকাশ কেন দিলে না! তাহলে আমি সদাকা করতাম এবং সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। (সুরা মুনাফিকূন : ১০) এক্ষেত্রে করণীয় হল, নিসাবের মালিক হওয়ার সময়টি সামনে রাখা এবং ঠিক তার এক বছর পর সেই সময়েই জাকাত আদায় করা।

নির্দিষ্ট সময়টি জানা থাকা সত্ত্বেও অন্য কোনো মাসের অপেক্ষায় বসে থাকা উচিত নয়। যে দিন এক বছর পূর্ণ হবে সেদিনই জাকাত আদায় করা ফরয হয়। এরপর যখনই জাকাত আদায় করুক সে পরিমাণই আদায় করতে হবে যা সেই দিন ফরয হয়েছিল। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১০৫৫৯) বছর পূর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে চন্দ্রবর্ষের হিসাব ধর্তব্য, সৌর বর্ষের নয়। জাকাতের নিয়ত জাকাত আদায় হওয়ার জন্য জাকাত প্রদানের নিয়ত করা জরুরি। -রদ্দুল মুহতার ২/২৫৮ একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই জাকাত প্রদান করতে হবে। জনসমর্থন অর্জনের জন্য, লোকের প্রশংসা কুড়ানোর জন্য কিংবা অন্য কোনো জাগতিক উদ্দেশ্যে জাকাত দেওয়া হলে তা আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না।-সূরা বাক্বারা ২৬৪ জাকাতের উপযুক্ত খাতে যেমন ফকীর-মিসকীনকে দেওয়ার সময় জাকাতের নিয়ত করতে হবে। এটাই মূল নিয়ম। তবে নিজের সম্পদ থেকে জাকাতের টাকা পৃথক করে রাখলে পৃথক করার সময়ের নিয়তই যথেষ্ট হবে। এখান থেকে ফকীর-মিসকীনকে দেওয়ার সময় নতুন নিয়ত না করলেও জাকাত আদায় হয়ে যাবে।-রদ্দুল মুহতার ২/২৬৮ জাকাতের উদ্দেশ্যে টাকা পৃথক করে রাখলেও মালিক তা প্রয়োজনে খরচ করতে পারবে। তবে পরে জাকাত আদায়ের সময় জাকাতের নিয়ত করতে হবে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ১০৩৯১, ১০৩৯২ জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তিকে কিছু টাকা দান করা হয়েছে, কিন্তু দান করার সময় দানকারীর মনে জাকাতের নিয়ত ছিল না তো গ্রহীতার কাছে সেই টাকা বিদ্যমান থাকা অবস্থায় জাকাতের নিয়ত করলে জাকাত আদায় হবে। তদ্রূপ জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তিকে কোনো খাদ্যদ্রব্য প্রদান করা হলে গ্রহীতা তা খেয়ে ফেলার বা বিক্রি করে দেওয়ার আগে জাকাতের নিয়ত করলেও জাকাত আদায় হবে। এরপরে জাকাতের নিয়ত করলে জাকাত হিসাবে আদায় হবে না।-আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৮; রদ্দুল মুহতার ২/২৬৮-২৬৯ জাকাতের টাকা আলাদা করে রাখা হয়েছে। কিন্তু ফকীর-মিসকীনকে দেওয়ার আগেই তা চুরি হয়ে গেল বা অন্য কোনোভাবে নষ্ট হয়ে গেল তাহলে জাকাত আদায় হয়নি। পুনরায় জাকাত দিতে হবে।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৬৯৩৬,৬৯৩৮; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৫৩১-৫৩২; রদ্দুল মুহতার ২/২৭০ যে সম্পদের উপর জাকাত ফরয হয়েছে তার চল্লিশ ভাগের একভাগ (২.৫০%) জাকাত দেওয়া ফরয। সম্পদের মূল্য নির্ধারণ করে শতকরা আড়াই টাকা হারে নগদ টাকা কিংবা ওই পরিমাণ টাকার কাপড়-চোপড় বা অন্য কোনো প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে দিলেও জাকাত আদায় হবে।

-সুনানে নাসায়ী হাদীস ২২৩০-২২৩৩; সুনানে আবু দাউদ হাদীস ১৫৭০-১৫৭২; সুনানে তিরমিযী হাদীস ৬২৩; সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস ১৮০৩ ; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭১৩৩-৭১৩৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস ১০৫৩৯-১০৫৮১ যে পরিমাণ জাকাত ফরজ হয় স্বেচ্ছায় তার চেয়ে বেশি দিয়ে দিলেও অসুবিধা নেই। এতে জাকাত আদায় এবং বাড়তি দান দু’টোরই ছওয়াব পাওয়া যাবে।- মুসনাদে আহমদ হাদীস ২০৭৭; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৬৯০৭ জাকাত গ্রহণকারীকে একথা জানানোর প্রয়োজন নেই যে, তাকে জাকাত দেওয়া হচ্ছে। যেকোনোভাবে দরিদ্র ব্যক্তিকে জাকাতের মাল দেওয়া হলে মালিক যদি মনে মনে জাকাতের নিয়ত করে তাহলে জাকাত আদায় হয়ে যাবে।-রদ্দুল মুহতার ২/২৬৮ অন্যের পক্ষ থেকে জাকাত আদায় করতে হলে তার অনুমতি নিতে হবে। অন্যথায় সে ব্যক্তির পক্ষ থেকে জাকাত আদায় হবে না। -রদ্দুল মুহতার ২/২৬৯ গৃহকর্তা যদি ঘরের লোকদেরকে জাকাত দেওয়ার অনুমতি দিয়ে রাখেন তাহলে তারা জাকাতের নিয়তে কাউকে কিছু দিলে তা জাকাত হিসেবে আদায় হবে। আর যদি পূর্বাগ্রে অনুমতি না দেওয়া থাকে আর ঘরের লোকেরা জাকাত হিসেবে কিছু দান করে তাহলে যাকে দান করা হল সে সেই অর্থ খরচ করার আগেই যদি গৃহকর্তা অনুমতি পাওয়া যায় তাহলেও তা জাকাত হিসেবে আদায় হবে। অন্যথায় জাকাত আদায় হবে না।

পুনরায় আদায় করতে হবে। কোনো দরিদ্র ব্যক্তির কাছে কারো কিছু টাকা পাওনা আছে। এখন সে যদি জাকাতের নিয়তে পাওনা মাফ করে দেয় তাহলে জাকাত আদায় হবে না। তাকে জাকাত দিতে হলে নিয়ম হল, প্রথমে তাকে জাকাত প্রদান করা এরপর সেখান থেকে ঋণ উসূল করে নেওয়া।-আদ্দুররুল মুখতার ২/২৭০; রদ্দুল মুহতার ২/২৭১ ঋণগ্রস্তকেই জাকাতের টাকা প্রদান করা উত্তম। কেননা এতে তাকে ঋণের দায় থেকে মুক্ত করা হয়। আর কোনো স্বচ্ছল ব্যক্তি যদি জাকাত থেকে গণ্য করা নিয়ত ছাড়াই ঋণগ্রহীতার ঋণ ক্ষমা করে দেয় তবে তো কথাই নেই।-রদ্দুল মুহতার ২/২৭১

মন্তব্য করুন

[wpdevart_facebook_comment curent_url="https://barishalpatrika.com/%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%A4-%E0%A6%95%E0%A7%80%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%86%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%A8/" order_type="social" title_text="" title_text_color="#000000" title_text_font_size="22" title_text_font_famely="monospace" title_text_position="left" width="100%" bg_color="#d4d4d4" animation_effect="random" count_of_comments="3" ]
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বরিশালে ১ হাজার শয্যার চীনা হাসপাতাল ও ৬ লেন মহাসড়কের দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান

হকারদের দখলে বরিশালের বিনোদনকেন্দ্রগুলো, নজর নেই বিসিসি ও প্রশাসনের

তারেক রহমানকে গালি দেওয়ায় বৈছাআ নেতার বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড়

বরিশাল মহানগর জামায়াতের অগ্রসর কর্মী শিক্ষা বৈঠক সম্পন্ন 

বরিশালে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের ঈদ পুণর্মিলনী অনুষ্ঠিত

ঈদযাত্রায় সড়কে ৩১৫ দুর্ঘটনায় নিহত ৩২২ জন : যাত্রী কল্যাণ সমিতি

বিতর্কিত ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে মণিপুরে ব্যাপক বিক্ষোভ

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একই পরিবারের ৬ জনসহ নিহত ২৪

ফিলিস্তিনের ঐতিহাসিক ওমরি মসজিদ যেভাবে নির্মিত হয়েছে

দুনিয়া বদলাতে চাইলে ব্যবসাই সবচেয়ে শক্তিশালী কাঠামো: প্রধান উপদেষ্টা

১০

আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা

১১

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর-লুটপাট, সারাদেশে গ্রেফতার ৭২

১২

দেশে স্টারলিংকের পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু

১৩

নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক যাত্রা নিশ্চিতকরণে বরিশালে র‍্যাব-৮ এর সাপোর্ট সেন্টার স্থাপন

১৪

বোরহানউদ্দিনে গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

১৫

বরগুনার বদরখালীতে মদনটাক হত্যার ঘটনায় শপথপাঠ

১৬

বরিশালে চুরির অভিযোগে দুই যুবককে মাথার চুল কেটে নির্যাতন

১৭

ভোলায় অস্ত্র-ইয়াবাসহ বিএন‌পির ৫ নেতাকর্মী আটক

১৮

বরিশালে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২৫ জন আহত

১৯

বরিশালে তরমুজ চুরিতে বাধা দেওয়ায় কৃষককে পিটিয়ে হত্যা

২০