বরিশাল নগরীর বাংলা বাজার সংলগ্ন নিউ হাউজ রোডের বাসিন্দা শাহজাহান শেখের ভাড়াটিয়া সত্তরোর্ধ সেলিম মোল্লা। জীবনের ২৭টি বছর কাটিয়েছেন প্রবাসে। দেশে ফিরে বেশ কয়েক বছর স্বাভাবিক জীবনযাপন করলেও হঠাৎ তার নামের সাথে যুক্ত হয় পাগলের তকমা। প্রায় বছর খানেক যাবত কাটাচ্ছেন মানবেতর জীবন। অর্ধাহারে অনাহারে পার করছেন দিনের পর দিন। এমনকি তীব্র শীতের মধ্যেও তাকে বিবস্ত্র করে ফেলে রাখা হয় বেলকুনিতে। এমনটাই অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
বাড়ির বেলকুনিতে বিবস্ত্র অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে সেলিম মোল্লাকে। পানির পিপাসায় কাতরাচ্ছেন তিনি। বলছেন- মা আমাকে একটু পানি দাও, আমাকে একটু পানি দাও। পাশের রুমেই খোশ গল্পে মশগুল স্ত্রী ও স্বজনরা। এ সময় সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে হন্তদন্ত হয়ে সেলিম মোল্লাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় ভিতরের রুমে। আটকে দেয়া হয় ঘড়ের সকল দরজা-জানালা। ভিতর থেকে বলা হয়- কোন সাংবাদিকে কাজ হবে না, মায়ের থেকে কি মাশির দরদ বেশি হয়ে গেছে। এর কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়ির ভিতরে ঢুকতে দেখা যায় সেলিম মোল্লার ছোট শালিকাকে। সাংবাদিকদের দেখে দ্রুত বাড়ির মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করেন তিনি। মূল ফটকে তালাবদ্ধ থাকায় ঘড়ে ঢুকতে কিছু সময় লাগে তার। এ সময় সাংবাদিকরা তার কাছে দুলাভাইয়ের পরিনতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কিছু বলতে রাজি না হয়ে কিছুটা রহস্যজনক আচরণ করে বাড়ির মধ্যে ঢুকে যান।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয়রা জানান- সেলিম মোল্লা দীর্ঘদিন যাবত প্রবাসে ছিলেন। দেশে আসার পরও সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করেছেন। হঠাৎ শুনি উনি পাগল হয়ে গেছেন। কিন্তু ওনার আচরণে তা কখনো লক্ষণীয় হয়নি। ওনাকে প্রাশয়ই ওনার স্ত্রী, দুই শালিকা মারধর করে বিবস্ত্র করে মাটিতে ফেলে রাখে। ঠিক মতো খাবার ও পানি দেয়া হয় না। আমরা অনেকবার দেখে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছি কিন্তু তারা আমাদের সাথে খুব খারাপ আচরণ করেছে। এ জন্য কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না।
এরপর স্থানীয়দের অভিযোগে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন আলেকান্দা পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই মেহেদি। তিনি এসে পুলিশ পরিচয় দিয়ে দরজা খুলতে বললে দরজা না খুলে ভিতর থেকে বলা হয়- পুলিশ আমাদেরও আছে। ঘড়ে পুরুষ লোক নাই, পুরুষ লোক না আসলে দরজা খোলা যাবেনা। আপনারা অপেক্ষা করেন।
ঘন্টাখানেক পর ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন সেলিম মোল্লার শ্যালক লিটন। এসেই হাকডাক তুলে পুলিশ ও সংবাদকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেন- আপনার এসেছেন কেন, এখানে আপনারদের কাজ কি? বলেই তিনি ঘড়ের ভিতর গিয়ে দরজা বন্ধ করে রাখেন। এ সময় পুলিশ ঘড়ের মধ্যে যেতে চাইলে তিনি ঘড়ে ঢুকতে বাধা দেন। লিটন নগরীর ডোস্ট পাম্পের মালিকের চাচতো ভাই বলে জানা গেছে। তিনি ওই পাম্পের দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন।
এর কিছুক্ষণ পর ছুটে আসেন সেলিম মোল্লার ভায়রা ছেলে পরিচয়দানকারী সজল নামের এক ব্যক্তি। তিনি এসেও হম্ভিতম্ভি দেখিয়ে বলেন- আমার খালু পাগল। তাকে তার পরিবারের লোক কিভাবে রাখবে, তা নিয়ে আপনাদের দরকার কি? এ সময় পুলিশ ঘড়ের ভিতরে ঢুকতে চাইলে বাধা দেন সজল। পরে তিনিও ঘড়ের ভিতরে ঢুকে দরজা আটকে দেন। ফলে বাধ্য হয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন পুলিশ ও সংবাদকর্মীরা।
এরপূর্বে পুলিশ ও সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন স্থানীয় কাউন্সিলর শাকিল হোসেন পলাশের ভাই পরিচয়দানকরী এক ব্যক্তি। এসেই হাকডাক দিয়ে তিনি বলেন- আপনারা চলে যান। এখানে আপনাদের কোন কাজ নেই। কাউন্সিলর সাহেব বলেছেন তিনি বিষয়টি সমাধান করবেন। তাতে আপনাদের কোন সমস্য আছে?
এ বিষয়ে জানতে কাউন্সিলর শাকিল হোসেন পলাশের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে আলেকান্দা পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই মেহেদি বলেন- স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে এখানে এসে জানতে পারি প্রবাস ফেরত এক ব্যক্তিকে মানসিক ও শারিরিক নির্যাতন করা হয়। আমরা বিষয়টি জানতে তার পরিবারের লোকদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা দরজা খোলেনি।